জনপ্রিয় বাংলা কবিতা | সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিতা

বাংলা ভাষার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হচ্ছে কবিতা অনেক সময় অনেক কবি তাদের মনের কল্পনা প্রকৃতি ভালোলাগার মুহূর্ত নদী বিভিন্ন জায়গা ইত্যাদি নিয়ে কোনো না কোনো সময়ে বিভিন্ন সাজিয়ে সুন্দর পরিমার্জিত ভাষা সাজিয়ে ছন্দে ছন্দে কবিতা বানিয়েছেন যা কিনা আমাদের মন খারাপের সময় বিভিন্ন চিন্তাভাবনায় আমরা তা পাঠ করি |  কবিতা অনেক সময় অনেকের আবেগ ভালো লাগা ভালোবাসা ইত্যাদির বহিঃপ্রকাশ ঘটায় নিম্নে কয়েকটি কবিতা আর্টিকেল হিসাবে প্রকাশ করা হলো আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে |

আত্ম অস্ত্রগার  

মোহাম্মদ রফিকুউজ্জামান

মাথার উপরে এক শয়তানের কু-বিশাল ছায়া।।

কুচক্রী চক্রের দশা হয়ে মেলে আছে তার মহাজনী খাতা।।

আমি এই দৃশ্য থেকে মুক্তি চাই, এই সব কুমন্ত্রের মায়া।।

ছিন্ন করে হতে চাই অদৃষ্টের আপন বিধাতা।।

অথচ ছায়ার সাথে যুদ্ধ করা যায় না কখনো।।

ছায়াধারীকেই তাই প্রত্যহ সন্ধান করি আমি।।

নিজেকে কঠিন স্বরে বলি, অস্তিত্বের বীজ বোনো।।

নিজের গভীরে আর নিজে আঁকো নিজের আগামী।।

যদিও জেনেছি সব শয়তানেরা জন্ম দেয় অপচ্ছায়াজালে।।

এমন কুটিল স্বত্বা যার পরে ভর করা যায়।।

বেদের বহর

জসীমউদ্দীন

মধুমতী নদী দিয়া,

বেদের বহর ভাসিয়া চলেছে কূলে ঢেউ আছাড়িয়া। 

জলের উপরে ভাসাইয়া তারা ঘরবাড়ি সংসার,

নিজেরাও আজ ভাসিয়া চলেছে সঙ্গ লইয়া তার।

মাটির ছেলেরা অভিমান করে ছাড়িয়া মায়ের কোল,

নাম-হীন কত নদী-তরঙ্গে ফিরিছে খাইয়া দোল।

দুপাশে বাড়ায়ে বাঁকা তট-বাহু সাথে সাথে মাটি ধায়,

চঞ্চল ছেলে আজিও তাহারে ধরা নাহি দিল হায়।

কত বন পথ সুশীতল ছায়া ফুল-ফল-ভরা গ্রাম,

শস্যের খেত আলপনা আঁকি ডাকে তারে অবিরাম!

  কবর

  জসিম উদ্দিন

এইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে,
তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।
এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ,
পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক।
এখানে ওখানে ঘুরিয়া ফিরিতে ভেবে হইতাম সারা,
সারা বাড়ি ভরি এত সোনা মোর ছড়াইয়া দিল কারা।
সোনালী ঊষায় সোনামুখে তার আমার নয়ন ভরি,
লাঙ্গল লইয়া ক্ষেতে ছুটিতাম গাঁয়ের ও-পথ ধরি।
যাইবার কালে ফিরে ফিরে তারে দেখে লইতাম কত,
এ কথা লইয়া ভাবি-সাব মোর তামাশা করিত শত।

এমন করিয়া জানিনা কখন জীবনের সাথে মিশে,
ছোট-খাট তার হাসি-ব্যথা মাঝে হারা হয়ে গেনু দিশে।
বাপের বাড়িতে যাইবার কালে কহিত ধরিয়া পা,
আমারে দেখিতে যাইও কিন্তু উজান-তলীর গাঁ।
শাপলার হাটে তরমুজ বেচি দু পয়সা করি দেড়ী,
পুঁতির মালা এক ছড়া নিতে কখনও হতনা দেরি।
দেড় পয়সার তামাক এবং মাজন লইয়া গাঁটে,
সন্ধ্যাবেলায় ছুটে যাইতাম শ্বশুর বাড়ির বাটে !
হেস না–হেস না–শোন দাদু সেই তামাক মাজন পেয়ে,
দাদী যে তোমার কত খুশি হোত দেখিতিস যদি চেয়ে।
নথ নেড়ে নেড়ে কহিত হাসিয়া, ‘এতদিন পরে এলে,
পথপানে চেয়ে আমি যে হেথায় কেঁদে মরি আঁখি জলে।’

আমারে ছাড়িয়া এত ব্যথা যার কেমন করিয়া হায়,
কবর দেশেতে ঘুমায়ে রয়েছে নিঝ্ঝুম নিরালায়।
হাত জোড় করে দোয়া মাঙ্ দাদু, ‘আয় খোদা, দয়াময়,
আমার দাদীর তরেতে যেন গো ভেস্ত নাজেল হয়।’

তার পরে এই শুন্য জীবনে যত কাটিয়াছি পাড়ি,
যেখানে যাহারে জড়ায়ে ধরেছি সেই চলে গেছে ছাড়ি।
শত কাফনের শত কবরের অঙ্ক হৃদয়ে আঁকি
গনিয়া গনিয়া ভুল করে গনি সারা দিনরাত জাগি।
এই মোর হাতে কোদাল ধরিয়া কঠিন মাটির তলে,
গাড়িয়া দিয়াছি কতসোনা মুখ নাওয়ায়ে চোখের জলে।
মাটিরে আমি যে বড় ভালবাসি, মাটিতে লাগায়ে বুক,
আয় আয় দাদু, গলাগলি ধরে কেঁদে যদি হয় সুখ।

এইখানে তোর বাপ্জী ঘুমায়, এইখানে তোর মা,
কাঁদছিস তুই ? কি করিব দাদু, পরান যে মানে না !
সেই ফাল্গুনে বাপ তোর এসে কহিল আমারে ডাকি,
বা-জান, আমার শরীর আজিকে কি যে করে থাকি থাকি।
ঘরের মেঝেতে সপ্ টি বিছায়ে কহিলাম, বাছা শোও,
সেই শোওয়া তার শেষ শোওয়া হবে তাহা কি জানিত কেউ ?
গোরের কাফনে সাজায়ে তাহারে চলিলাম যবে বয়ে,
তুমি যে কহিলা–বা-জানেরে মোর কোথা যাও দাদু লয়ে?
তোমার কথার উত্তর দিতে কথা থেমে গেল মুখে,
সারা দুনিয়ার যত ভাষা আছে কেঁদে ফিরে গেল দুখে।
তোমার বাপের লাঙল-জোয়াল দু হাতে জড়ায়ে ধরি,
তোমার মায়ে যে কতই কাঁদিত সারা দিন-মান ভরি।
গাছের পাতারা সেই বেদনায় বুনো পথে যেত ঝরে,
ফাল্গুনী হাওয়া কাঁদিয়া উঠিত শুনো মাঠখানি ভরে।
পথ দিয়ে যেতে গেঁয়ো-পথিকেরা মুছিয়া যাইতো চোখ,
চরণে তাদের কাঁদিয়া উঠিত গাছের পাতার শোক।
আথালে দুইটি জোয়ান বলদ সারা মাঠ পানে চাহি,
হাম্বা রবেতে বুক ফাটাইত নয়নের জলে নাহি।
গলাটি তাদের জড়ায়ে ধরিয়া কাঁদিত তোমার মা,
চোখের জলের গহীন সায়রে ডুবায়ে সকল গাঁ।
উদাসিনী সেই পল্লীবালার নয়নের জল বুঝি,
কবর দেশের আন্ধার ঘরে পথ পেয়েছিল খুঁজি।
তাই জীবনের প্রথম বেলায় ডাকিয়া আনিল সাঁঝ,
হায় অভাগিনী আপনি পরিল মরণ-বীষের তাজ।
মরিবার কালে তোরে কাছে ডেকে কহিল, ‘বাছারে যাই,
বড় ব্যথা রল দুনিয়াতে তোর মা বলিতে কেহ নাই;
দুলাল আমার, দাদু রে আমার, লক্ষ্মী আমার ওরে,
কত ব্যথা মোর আমি জানি বাছা ছাড়িয়া যাইতে তোরে।’
ফোঁটায় ফোঁটায় দুইটি গণ্ড ভিজায়ে নয়ন-জলে,
কি জানি আশিস্ করি গেল তোরে মরণ-ব্যথার ছলে।

ক্ষণ পরে মোরে ডাকিয়া কহিল, ‘আমার কবর গায়,
স্বামীর মাথার ‘মাথাল’ খানিরে ঝুলাইয়া দিও বায়।’
সেই সে মাথাল পচিয়া গলিয়া মিশেছে মাটির সনে,
পরানের ব্যথা মরে না কো সে যে কেঁদে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে।
জোড়-মানিকেরা ঘুমায়ে রয়েছে এইখানে তরু-ছায়,
গাছের শাখারা স্নেহের মায়ায় লুটায়ে পড়েছে গায়ে।
জোনাকি মেয়েরা সারা রাত জাগি জ্বালাইয়া দেয় আলো,
ঝিঁঝিরা বাজায় ঘুমের নুপুর কত যেন বেসে ভাল।
হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু,’রহমান খোদা, আয়,
ভেস্ত নাজেল করিও আজিকে আমার বাপ ও মায়ে।’

এইখানে তোর বু-জীর কবর, পরীর মতন মেয়ে,
বিয়ে দিয়েছিনু কাজীদের ঘরে বনিয়াদী ঘর পেয়ে।
এত আদরের বু-জীরে তাহারা ভালবাসিত না মোটে।
হাতেতে যদিও না মারিত তারে শত যে মারিত ঠোঁটে।
খবরের পর খবর পাঠাত, ‘দাদু যেন কাল এসে,
দু দিনের তরে নিয়ে যায় মোরে বাপের বাড়ির দেশে।
শ্বশুর তাহার কসাই চামার, চাহে কি ছাড়িয়া দিতে,
অনেক কহিয়া সেবার তাহারে আনিলাম এক শীতে।
সেই সোনামুখ মলিন হয়েছে, ফোটে না সেথায় হাসি,
কালো দুটি চোখে রহিয়া রহিয়া অশ্রু উঠিত ভাসি।
বাপের মায়ের কবরে বসিয়া কাঁদিয়া কাটাত দিন,
কে জানিত হায়, তাহারও পরানে বাজিবে মরণ-বীণ!
কি জানি পচানো জ্বরেতে ধরিল আর উঠিল না ফিরে,
এইখানে তারে কবর দিয়াছি দেখে যাও দাদু ধীরে।

ব্যথাতুরা সেই হতভাগিনীরে বাসে নাই কেউ ভাল,
কবরে তাহার জড়ায়ে রয়েছে বুনো ঘাসগুলি কালো।
বনের ঘুঘুরা উহু উহু করি কেঁদে মরে রাতদিন,
পাতায় পাতায় কেঁপে ওঠে যেন তারি বেদনার বীণ।
হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু,’আয় খোদা দয়াময়!।
আমার বু-জীর তরেতে যেন গো ভেস্ত নাজেল হয়।’

হেথায় ঘুমায় তোর ছোট ফুপু সাত বছরের মেয়ে,
রামধনু বুঝি নেমে এসেছিল ভেস্তের দ্বার বেয়ে।
ছোট বয়সেই মায়েরে হারায়ে কি জানি ভাবিত সদা,
অতটুকু বুকে লুকাইয়াছিল কে জানিত কত ব্যথা।
ফুলের মতন মুখখানি তার দেখিতাম যবে চেয়ে,
তোমার দাদীর মুখখানি মোর হৃদয়ে উঠিত ছেয়ে।
বুকেতে তাহারে জড়ায়ে ধরিয়া কেঁদে হইতাম সারা,
রঙিন সাঁঝেরে ধুয়ে মুছে দিত মোদের চোখের ধারা।

একদিন গেনু গজ্নার হাটে তাহারে রাখিয়া ঘরে,
ফিরে এসে দেখি সোনার প্রতিমা লুটায় পথের পরে।
সেই সোনামুখ গোলগাল হাত সকলি তেমন আছে,
কি জেনি সাপের দংশন পেয়ে মা আমার চলে গ্যাছে।
আপন হাতেতে সোনার প্রতিমা কবরে দিলাম গাড়ি–
দাদু ধর–ধর–বুক ফেটে যায়, আর বুঝি নাহি পারি।
এইখানে এই কবরের পাশে, আরও কাছে আয় দাদু,
কথা ক’সনাক, জাগিয়া উঠিবে ঘুম-ভোলা মোর যাদু।
আস্তে আস্তে খুড়ে দেখ্ দেখি কঠিন মাটির তলে,
দীন দুনিয়ার ভেস্ত আমার ঘুমায় কিসের ছলে।

ওই দূর বনে সন্ধ্যা নামিছে ঘন আবিরের রাগে,
এমনি করিয়া লুটায়ে পড়িতে বড় সাধ আজ জাগে।
মজীদ হইছে আজান হাঁকিছে বড় সকরুণ সুর,
মোর জীবনের রোজকেয়ামত ভাবিতেছি কত দুর!
জোড়হাতে দাদু মোনাজাত কর্, ‘আয় খোদা, রহমান,
ভেস্ত নাজেল করিও সকল মৃত্যু-ব্যথিত প্রাণ!

সেই মানুষটি যে ফসল ফলিয়েছিল   

 বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

সেই বিরাট খামারটাতে কখনো বৃষ্টি হয় না

আমারই কপালের ঘাম দিয়ে গাছগুলোকে

তৃষ্ণা মেটাতে হয়

সেখানে যে কফি ফলে, আর চেরি গাছে

যে টুকটুকে লাল রঙের বাহার ধরে

তা আমারই ফোঁটা ফোঁটা রক্ত, যা জমে কঠিন হয়েছে

কফিগুলোকে ভাজা হবে, রোদে শুকোতে হবে,

তারপর গুড়ো করতে হবে

যতক্ষণ না পর্যন্ত তাদের গায়ের রঙ হবে

আফ্রিকার কুলির গায়ের রঙের ঘোর কৃষ্ণবর্ণ

আফ্রিকার কুলির জমাট রক্তে ঘোর কৃষ্ণবর্ণ

কে ভোর না হতেই ওঠে?

কে তখন থেকেই খেটে মরে?

কে লাঙ্গল কাঁধে দীর্ঘ রাস্তা কুঁজো হয়ে হাঁটে?

আর কেই বা শস্যের বোঝা বইতে বইতে ক্লান্ত হয়?

কে বীজ বপন করে?

আর তার বিনিময়ে যা পায়, তা হ’লো

ঘৃণা, বাসি রুটি, পঁচা মাছের টুকরো,

শতচ্ছিন্ন নোংরা পোশাক, কয়েকটা নয়া পয়সা?

আর এরপরেও তাকে পুরস্কৃত করা হয়

চাবুক আর বুটের ঠোক্কর দিয়ে

কে সেই মানুষ?

কে ক্ষেতগুলোতে গম আর ভূট্টা ফলায়?

আর সারি বাধা কমলা গাছগুলোতে

ফুলের উৎসব আনে?

কে সেই মানুষ?

কে উপর ওয়ালাকে গাড়ি, যন্ত্রপাতি,

মেয়ে মানুষ কেনার টাকা আর

মোটরের নিচে চাপা পড়ার জন্য

নিগ্রদের মুন্ডুগলি যোগান দেয়?

কে সাদা আদমিকে বড়লোক তৈরি করে

তাকে রাতারাতি ফাঁপিয়ে তোলে

পকেটে টাকা যোগায়?

-কে সেই মানুষ?

তাদের জিজ্ঞাসা করো

যে পাখিরা গান গায়

যে ঝর্ণারা নিশ্চিত মনে

এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে

যে বাতাস এই মহাদেশের মধ্যকার মানচিত্র থেকে মর্মরিত হচ্ছে

তারা সকলেই উত্তর দেবে

ঐ কালো রঙের মানুষটা-

যে দিনরাত গাধার খাটুনি খাটছে।

আহা!

আমাকে অন্তত ঐ তালগাছটার চূড়োয় উঠতে দাও

সেখানে বসে আমি মদ খাবো

তালগাছ থেকে যে মদ চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ে;

আর মাতলামোর মধ্যে আমি নিশ্চয়ই ভুলে যাব

আমি একজন কালো রঙের মানুষ

আমার জন্যেই এই সব।

 স্বাধীনতা  

দেবব্রত সিংহ

কথাটা ত মিছা লয়
লালগড়ের জঙ্গলমহলের সবাই জানে
ডুমুরগড়্যা, বেণাচাপড়া, বাঁকিশোল,হাতিঘোসা,শালডাঙ্গা
মোহনপুর, কলাইমুড়ির জানে সবাই
দিনের বেলা পুলিশ
রাতের বেলা উয়ারা,
পুলিশ বলে স্বাধীনতা
উয়ারা বলে মিছাকথা
ফের পুলিশ বলে স্বাধীনতা
ফের উয়ারা বলে মিছা কথা,
আমরা গরীব মানুষ
আমরা গো মুখখু মানুষ
খিদা বুঝি তিলষা বুঝি
ইসবের ত কিছু বুঝি নাই,
তবু দিনের বেলা পুলিশ আসে,
“হপন আছিস?”
হঁ আইজ্ঞা আছি
আমি হপন মান্ডি
বাপ তিলকা মান্ডি।
রাতের বেলা জঙ্গলমহলে রাত নামলে
আমার তালপাতায় ছাওয়া মাটির ঘরে
জুমড়াকাঠের আংরার পারা অন্ধকার
কপাট ও নাই হুড়কাও নাই
তখন উয়ারা আসে
কমরেড হপন আছো?
বলি হঁ আইজ্ঞা আছি
আমি হপন মান্ডি
বাপ তিলকা মান্ডি।

এমনি করে দিন কাটে
এমনি করে রাত কাটে
ইয়ার মাঝে গেলবছরে
বাঁকিশোলের কালভাট গেল বোমা তে উড়ে
তখন আমি খাটতে গেছি খড়গপুরের মুরগি খামারে
দিনটা ছিল বাবুদে পতকা তুলার দিন
আমরা হাভাতা মানুষ
আমরা গো মুখখু মানুষ
খিদা বুঝি তিলষা বুঝি
পতকা ত বুঝি নাই
তাই ভাল্যে ভাল্যে দেখছিলম
কিরম তিরঙ্গা পতকা তুলছে বাবুরা
খড়গপুরের টাউনের বাবু
দেখতে দেখতে পুলিশ গাড়ি,
পুলিশ বললেক, তোর নাম কি?
বললম, হপন মান্ডি
বাপ তিলকা মান্ডি।
গাঁ?
বেণাচাপড়া।
বলক?
লালগড় জঙ্গলমহল।
বললেক, আর বলতে হবেক নাই চল চল।
বলি যাব অ কুথাকে?
বললেক,লক আপে।
সেটা কী বঠে আইজ্ঞা?
সে তুই বুঝে যাবি থানাতে গেলেই বুঝে যাবি।

ই বাবা আমি হপন মান্ডি হে
গরিব মানুষ
খিদা বুঝি তিলষা বুঝি
উসবের ত কিছু বুঝি নাই।
মারাংবুরুর কিরা কাড়্যে বলছি
হাঁ দেখ অ বোমা যে কী জিনিস বঠে
বাপের কালে সেটা চোখে দেখি নাই।
বলতে বলতে আমার লাঙ্গল চষা আঁকল পরা হাতে
লুহার বেড়ি দিলেক পরাই
তারপরে ঘাড়ে ধরে ধাঁকালে জিবগাড়িতে দিলেক ভরে,
গাড়ির ভিতরে বন্দুকের নল ঠেকাই ইপাশে পুলিশ উপাশে পুলিশ
তার মাঝে আমি হপন মান্ডি
বাপ তিলকা মান্ডি।

দিনটা ছিল বাবুদে পতকা তুলার দিন
থানায় তখন পতকা তুলছে দারগাবাবু
আমরা গরীব মানুষ
আমরা গো মুখখু মানুষ
খিদা বুঝি তিলষা বুঝি
ইসবের ত কিছু বুঝি নাই
তাই শুদাইছিলম,
ইটা কী বঠে আঁইজ্ঞা?
এই পতকা জিনিসটা কি বঠে?
পতকা তুললে কী হবেক আমাদে?
মাত্তক এইটুকুন কথা
মাইরি বলছি,
সেই কথা শুনে কি বলব
ভেড়ার পালে যেমনি হামলে পড়ে নেকড়া হুঁড়াল
তেমনি করে আমার ঘাড়ের উপরে
হামলে পড়লেক দারগাবাবু
তা বাদে বুট জুতা পরা পায়ে
এমন একটা গড়ারি দিলেক মারে
আমি মু থুবড়াই গেলম পড়্যে
বললেক,
তুই জানিস নাই
তুই শুনিস নাই
শা-লা
ইটাই তো স্বাধীনতা
ইটাই তো স্বাধীনতা ।

আমি হপন মান্ডি
বাপ তিলকা মান্ডি
আমরা গরীব মানুষ
আমরা গো মুখখু মানুষ
খিদা বুঝথম
তিলষা বুঝথম
ইবার বুঝলম
কাকে বলে স্বাধীনতা
কাকে বলে মিছা কথা
কাকে বলে স্বাধীনতা
কাকে বলে মিছা কথা ।

শুভেচ্ছা 

 হুমায়ুন আজাদ

ভালো থেকো ফুল, মিষ্টি বকুল, ভালো থেকো।

ভালো থেকো ধান, ভাটিয়ালি গান, ভালো থেকো।

ভালো থেকো মেঘ, মিটিমিটি তারা।

ভালো থেকো পাখি সবুজ পাতারা।

ভালো থেকো চর, ছোট কুড়ে ঘর, ভালো থেকো।

ভালো থেকো চিল, আকাশের নীল, ভালো থেকো।

ভালো থেকো পাতা, নিশির শিশির।

ভালো থেকো জল, নদীটির তীর।

ভালো থেকো গাছ, পুকুরের মাছ, ভালো থেকো।

ভালো থেকো কাক কুহুকের ডাক, ভালো থেকো।

ভালো থেকো মাঠ, রাখালের বাশিঁ।

ভালো থেকো লাউ, কুমড়োর হাসি।

ভালো থেকো আম, ছায়া ঢাকা গ্রাম, ভালো থেকো।

ভালো থেকো ঘাস, ভোরের বাতাস, ভালো থেকো।

ভালো থেকো রোদ, মাঘের কোকিল,

ভালো থেকো বক আড়িয়ল বিল,

ভালো থেকো নাও, মধুমতি গাও,ভালো থেকো।

ভালো থেকো মেলা, লাল ছেলেবেলা, ভালো থেকো।

ভালো থেকো, ভালো থেকো, ভালো থেকো।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।