রিজিক নিয়ে উক্তি, স্ট্যাটাস, হাদিস, বাণী ও কোরআনের আয়াত
রিজিক (رزق) শব্দটির অর্থ সাধারণত জীবিকা, আহার বা রোজগার হিসেবে বোঝানো হয়, তবে ইসলামে এর ব্যাখ্যা অনেক গভীর এবং ব্যাপক। রিজিক শুধু ভৌত বা জাগতিক সম্পদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এর অন্তর্ভুক্ত মানসিক শান্তি, সুস্বাস্থ্য, ভালোবাসা, জ্ঞান, হেদায়েত এবং আত্মার পরিতৃপ্তি। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক সৃষ্ট জীবের জন্য রিজিক নির্ধারণ করেছেন, এবং এটিই হলো ইসলামের মৌলিক এক বিশ্বাস।
রিজিক নিয়ে কুরআনের আয়াত
কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলা রিজিকের ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন এবং তাঁর সৃষ্টিকুলের রিজিকের দায়িত্ব নিজেই গ্রহণ করেছেন। কিছু উল্লেখযোগ্য আয়াত নিম্নরূপ:
- সুরা আল-মুলক: “পৃথিবীতে এমন কোনো প্রাণী নেই যার রিজিক আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল নয়। তিনি তাদের স্থায়ী বসবাস এবং সাময়িক বিশ্রামের স্থানও জানেন। সবকিছু সুস্পষ্ট গ্রন্থে লিপিবদ্ধ রয়েছে।”
— (সুরা আল-মুলক, ৬৭:১৫)এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, প্রতিটি জীবের রিজিকের নিশ্চয়তা আল্লাহ তাআলা দেন। কেউই তাঁর ইচ্ছা ছাড়া একটি কণাও গ্রহণ করতে পারে না।
- সুরা আন-নাহল: “আল্লাহ যে পরিমাণে চান, রিজিক বাড়িয়ে দেন এবং কমিয়ে দেন। তারা দুনিয়ার জীবনে আনন্দিত হয়, অথচ দুনিয়ার জীবন আখিরাতের তুলনায় সামান্যই।”
— (সুরা আন-নাহল, ১৬:৭১)এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, রিজিক বাড়ানো ও কমানোর ক্ষমতা একমাত্র তাঁর হাতে। মানুষ যতই প্রচেষ্টা করুক, আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে কিছুই অর্জন করা সম্ভব নয়।
- সুরা আল-বাকারা: “আর রিজিকের জন্য আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করো না; বরং রিজিকের সন্ধান আল্লাহর কাছ থেকে করো।”
— (সুরা আল-বাকারা, ২:২২)আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিচ্ছেন যে, রিজিকের জন্য বেশি দুশ্চিন্তা না করে আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা উচিত। তিনি প্রতিটি সৃষ্ট জীবের প্রয়োজনীয় রিজিক সরবরাহ করবেন।
রিজিক নিয়ে উক্তি
আপনি কি রিজিক সম্পর্কে জানার জন্য এসেছেন । তাহলে আমাদের আজকের এই পোস্টে আপনাকে স্বাগতম । কারণ আজকে আমি আমার পোষ্টের মাধ্যমে রিজিক নিয়ে একটি তুলে ধরবো । রিজিক হচ্ছে মহান আল্লাহ তাআলার একটি নেয়ামত । মহান রাব্বুল আলামিন প্রত্যেক জীবের জন্য রিজিক নির্ধারণ করে রেখেছেন । যেটা আমাদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে তার থেকে শস্য দানা পরিমাণ বেশি আমরা সংগ্রহ করতে পারব না বা তার থেকে কম সংগ্রহ করতে পারব না। তাইতো রিজিক নিয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ বিভিন্ন ধরনের উক্তি করে গেছেন তাদের করা উক্তিগুলো আজকে আমি আমার পোস্টের মাধ্যমে তুলে ধরব । কোরানেও রিজিক সম্পর্কে নানা ধরনের আয়াত রয়েছে আশা করছি আপনারা আমাদের পোস্টের মাধ্যমে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন ।
আপনার রিজিক আপনার কষ্টের মাধ্যমেই উপার্জন করে নিতে হবে, আল্লাহ্ তায়ালা আপনাকে পথ দেখাবেন মাত্র।
সালমান বিন আবদুল আজিজ
মহান আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, “আকাশে রয়েছে তোমাদের রিজিক ও প্রতিশ্রুত সব কিছু।
সূরা জারিয়াত: ২২
হালাল অর্থ উপার্জন করে রিজিক গ্রহণের মধ্যে এক প্রকার শান্তি রয়েছে, যা হারাম অর্থ উপার্জন করে গ্রহণের মাঝে নেই।
মানাহিল আইমা
তোমরা আল্লাহর কাছে রিজিক তালাশ কর, তার ইবাদত কর এবং তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তারই কাছে তোমাদের ফিরে যেতে হবে।”
সুরা আনকাবুত : আয়াত ১৭
তোমার যতই অর্থ থাকুক না কেন তুমি তখনই রিজিক গ্রহণ করতে পারবে যখন মহান আল্লাহ্ তায়ালা চাইবেন।
ইব্রাহিম বিন খালিদ
হারাম রিজিক গ্রহণ করে আমরা উপকৃত হইনা বলেই মহান আল্লাহ্ তায়ালা তা আমাদের জন্য হারাম করেছেন।
নুরা আল আজিজ
মহান আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের প্রতি দয়ালু, যাকে ইচ্ছা রিজিক দান করেন, তিনি প্রবল পরাক্রমশালী।”
সুরা শুরা: আয়াত ১৯
সবসময় আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে শেখো, তিনি তোমার রিজিকের ব্যবস্থা করে রেখেছেন, তিনি তোমাকে নিরাশ করবেন না।”
মহানবি হযরত মুহাম্মত (স)
কার রিজিক কোথায় রয়েছে তা একমাত্র মহান আল্লাহ্ ব্যতিত কেউ জানেন না।
আব্রাহাম ইলাহি
হাদিসে রিজিক নিয়ে বাণী
রিজিক সংক্রান্ত বিষয়ে মহানবী (সা.)-এর অসংখ্য হাদিস আছে, যেগুলো থেকে রিজিকের তাৎপর্য এবং আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা সম্পর্কে গভীর শিক্ষা পাওয়া যায়। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস হলো:
- আল্লাহর প্রতি ভরসা: নবী করিম (সা.) বলেছেন: “যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি প্রকৃত ভরসা রাখতে, তবে তিনি তোমাদের রিজিক দিতেন যেমন পাখিদের রিজিক দেন। তারা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় বের হয় এবং সন্ধ্যায় পেট ভর্তি হয়ে ফিরে আসে।”
— (তিরমিজি, হাদিস নং ২৩৪৪)এই হাদিসের মাধ্যমে বোঝা যায়, আল্লাহর প্রতি দৃঢ় আস্থা ও ভরসা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাখিরা যেমন রিজিকের জন্য প্রচেষ্টা করে, তেমনিভাবে মানুষেরও উচিত প্রচেষ্টা করা, তবে সাথে সাথে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখা।
- পরিশ্রমের গুরুত্ব: নবী করিম (সা.) বলেছেন: “তোমরা যখন রিজিকের জন্য চেষ্টা করো, তখন জেনে রাখো, পরিশ্রম করা ফরজ, কিন্তু রিজিকের পরিমাণ নির্ধারিত।”
— (মুসলিম, হাদিস নং ১০৩৫)এই হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, মানুষকে রিজিকের জন্য পরিশ্রম করতে হবে, তবে তার রিজিকের পরিমাণ আল্লাহ আগেই নির্ধারণ করেছেন। তাই, উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই।
- সৎ উপার্জন: নবী (সা.) বলেছেন: “সেই ব্যক্তি কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যে হারাম রিজিক উপার্জন করে।”
— (বুখারি, হাদিস নং ৭৮৫৭)ইসলামে হালাল উপার্জনের গুরুত্ব অত্যন্ত বড়। একজন মুসলমানের উচিত সৎ ও বৈধ পথে রিজিক অর্জন করা এবং হারাম থেকে বিরত থাকা।
রিজিক নিয়ে স্ট্যাটাস
অনেকেই আছেন রিজিক নিয়ে স্ট্যাটাস তাদের ফেসবুক অথবা টুইটারে শেয়ার করতে চায় ।তাই তারা এ বিষয়ে জানার জন্য গুগলে সার্চ করে থাকেন । আশা করছি আপনারা আমাদের পোস্টের মাধ্যমে খুব সহজেই রিজিক নিয়ে স্ট্যাটাস পেয়ে যাবেন । এবং এই রিজিক সম্পর্কে স্ট্যাটাস গুলো আপনারা আপনাদের ফেসবুক অথবা টুইটার একাউন্টে শেয়ার করতে পারবেন । তাহলে আসুন জেনে নেয়া যাক রিজিক নিয়ে স্ট্যাটাস সম্পর্কে ।
পৃথিবীতে বিচরণশীল সকল প্রাণীর রিজিকের দায়িত্ব আমার (মহান আল্লাহ্ তায়ালার)।
(সূরা হুদ, আয়াত ৬)
তুমি যখন একজন গরিব-মিসকিনকে খাবার দান করবে, আল্লাহ্ তায়ালা তোমার রিজিককে পবিত্র করে দিবেন।
মহানবি হযরত মুহাম্মত (স)
রিজিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ্ তায়ালা, আমরা সকলে রিজিকের জন্য একমাত্র তার নিকট প্রার্থনা করবো।
মহানবি হযরত মুহাম্মত (স)
রিজিক অর্জনের জন্য শুধু আল্লাহর উপর ভরসা করে কাজ বন্ধ করে বসে থাকলে হবেনা, আপনাকে পরিশ্রম করতে হবে।
আবুল মিশকাত
রিজিক মহান আল্লাহ তা’য়ালা কর্তৃক বড় নেয়ামত৷ আল্লাহ্ প্রদত্ত রিজিক প্রতিটি প্রাণী ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে প্রাপ্ত হয়ে থাকে ৷
(সূরা হুদ)
মহান আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা করেন তার রিজিক বাড়িয়ে দেন এবং এবং যার প্রতি অসন্তুষ্ট হন তার রিজিক সংকুচিত করেন।
(সূরা আর-রাদ: ২৬)
রিজিক ও মানুষের দায়িত্ব
ইসলামic দৃষ্টিকোণ থেকে, মানুষের দায়িত্ব হলো আল্লাহর দেওয়া রিজিকের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা, তা যথাযথভাবে ব্যবহার করা, এবং সৎ পথে রিজিকের জন্য প্রচেষ্টা করা। কিছু বিষয় এখানে বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক:
- প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম: কুরআনে বলা হয়েছে, “মানুষের জন্য তাই রয়েছে, যা সে কামনা করে এবং চেষ্টা করে।”
— (সুরা আন-নাজম, ৫৩:৩৯)মানুষকে তার প্রয়োজনীয় রিজিকের জন্য আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে বৈধ পথে পরিশ্রম করতে হবে। প্রচেষ্টা ছাড়া রিজিক পাওয়া সম্ভব নয়, এবং আল্লাহ সেই প্রচেষ্টার ফল দেন।
- অভাব বা দারিদ্র্য নিয়ে দুশ্চিন্তা না করা: আল্লাহ বলেন, “আর তোমাদেরকে তিনি আকাশ ও পৃথিবীর সমস্ত ভান্ডারের অধিকারী বানিয়েছেন, কিন্তু দারিদ্র্যের ভয় মানুষের মনকে শাসন করে।”
— (সুরা আল-ইমরান, ৩:১৪৫)ইসলাম দারিদ্র্যকে অতিক্রম করতে ধৈর্য ধরার শিক্ষা দেয়। একজন মুমিনের উচিত সবসময় আল্লাহর ওপর ভরসা করা, কারণ আল্লাহ তাঁর বান্দার জন্য সঠিক সময়ে রিজিক প্রদান করবেন।
- রিজিক বৃদ্ধির মাধ্যম: হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে দান করে, আল্লাহ তার রিজিক বাড়িয়ে দেন।”
— (তিরমিজি, হাদিস নং ১৮৪৬)দানের মাধ্যমে রিজিক বৃদ্ধি হয়। এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, আল্লাহর পথে দান করা শুধু আখিরাতের জন্য ফায়দা দেয় না, বরং দুনিয়াতে রিজিকের বরকতও বৃদ্ধি করে।
রিজিক ও আল্লাহর পরীক্ষা
রিজিক কখনো কখনো মানুষের জন্য পরীক্ষা হিসেবেও আসে। কারো রিজিক প্রাচুর্য হলে তা তার জন্য পরীক্ষা, আর কারো রিজিক সীমিত হলে সেটাও তার জন্য পরীক্ষা। এ বিষয়ে কুরআনে বলা হয়েছে:
“আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করি কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ হ্রাস, জীবন ও ফলফলাদির দ্বারা। আর ধৈর্যশীলদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে।”
— (সুরা আল-বাকারা, ২:১৫৫)
ধনী ব্যক্তি তার প্রাচুর্যের জন্য কৃতজ্ঞ হবে এবং গরিব ব্যক্তি তার ধৈর্যের জন্য প্রতিদান পাবে। ইসলামে ধন-সম্পদ বা দারিদ্র্য উভয়ই আল্লাহর পরীক্ষা হিসেবে ধরা হয়।
উপসংহার
ইসলামে রিজিক নিয়ে কুরআন ও হাদিসের নির্দেশনাগুলো আমাদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রিজিকের ব্যাপারে মানুষের ভরসা আল্লাহর ওপর রাখতে হবে এবং প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তবে এই প্রচেষ্টার সাথে সাথে সৎ উপায়ে জীবিকা অর্জন করা এবং আল্লাহর দেওয়া দানের জন্য কৃতজ্ঞ থাকা আবশ্যক। ইসলামের দৃষ্টিতে, রিজিকের প্রাচুর্য বা সীমাবদ্ধতা উভয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে এবং এটি একজন মুসলমানের জন্য পরীক্ষার মাধ্যম হতে পারে।
আরো দেখুন :